সদ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুফল জনগণের মাঝে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক Territorial Waters and Maritime Zones Act, l974 প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল (International Tribunal for the Law of the Sea) কর্তৃক ২০১২ সালে মায়ানমারের সাথে এবং ২০১৪ সালের ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মোট ১,১৮,৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সমুদ্র বিজয়ের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ সুনীল প্রবৃদ্ধির অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির যুগে প্রবেশ করে।
বাংলাদেশের অর্জিত সমুদ্রসীমায় সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত ২০-০৮-২০১৪ তারিখ অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের অনুবৃত্তিক্রমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব-কে আহবায়ক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট “সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয় কমিটি” গঠন করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশে সুনীল অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরের কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনে ব্লু ইকোনমি সেল গঠন করা হয়। ব্লু ইকোনমি সেল, ব্লু ইকোনমির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, দপ্তর সংস্থাসমূহের সাথে কাজ করে সমন্বয় সাধন করছে।
মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরের সমন্বয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সর্বোচ্চ ব্যবহারের লক্ষ্যে (১)জ্বালানি শক্তি (তেল ও গ্যাস), (২) খনিজ সম্পদ, (৩) সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ, (৪) মেরিকালচার, (৫) পর্যটন এবং বিনোদন, (৬) শিপিং, সামুদ্রিক পরিবহণ এবং বাণিজ্য, (৭) জাহাজ নির্মাণ, (৮) শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ, (৯) খাদ্য নিরাপত্তা, (১০) খাদ্য এবং জীবিকা, (১১) নবায়নযোগ্য সামুদ্রিক শক্তি, (১২) মেরিন বায়োটেকনোলজি, (১৩) সাবমেরিন মাইনিং, (১৪) উপকূলীয় শিপিং/ফিডার পরিষেবা, (১৫) অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহন, (১৬) নীল শক্তি (অস্মোসিস) এবং বায়োমাস, (১৭) সামুদ্রিক খনিজ মাইনিং, (১৮) কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ, (১৯) গ্রিনিং কোস্টাল বেল্ট, (২০) সামুদ্রিক নিরাপত্তা নজরদারি এবং (২১) সমন্বিত সামুদ্রিক স্থানিক পরিকল্পনা খাতসমূহকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এ সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর কর্তৃক বর্তমানে স্বল্প মেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রায় চার শতাধিক কার্যক্রম/প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তাছাড়া সুনীল অর্থনীতির যথাযথ বিকাশের লক্ষ্যে ব্লু ইকোনমি সেল কর্তৃক নিম্নবর্ণিত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে:
সর্বোপরি সমুদ্রের মৎস্য, প্রাণিজ সম্পদ, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ, যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ, উপকূলীয় ও দ্বীপ অঞ্চলে পর্যটনের বিকাশ, উপকূলীয় অঞ্চলের নানাবিধ সম্পদ ও সম্ভাবনা, শিক্ষা, গবেষণাসহ নানা মাত্রিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমুদ্রের ভূমিকা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।